প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ইতিহাস (১৯১৪ সালের ১ আগস্ট থেকে ১৯১৮ সালের ১১ নভেম্বর পর্যন্ত) আধুনিক ইতিহাসের অন্যতম বড় সংঘর্ষ হিসেবে পরিচিত। এই যুদ্ধে বিশ্বের ৬২ শতাংশ জনসংখ্যার ৩৮টি দেশ সরাসরি অংশগ্রহণ করে। এই যুদ্ধের ফলে সামরিক, রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তন আসে, যা পরবর্তী অনেক সংঘাতের মূলে ছিল। যুদ্ধটি ১৯১৪ সালের ১ আগস্ট শুরু হয়ে ১৯১৮ সালের ১১ নভেম্বর শেষ হয় এবং এতে সরাসরি বিশ্বের ৬২ শতাংশ জনসংখ্যার প্রতিনিধিত্বকারী ৩৮টি দেশ অংশগ্রহণ করে।
বিশ্বের অনেক দেশই এই যুদ্ধে নিজেদের অবস্থান এবং প্রভাব ধরে রাখতে চেষ্টা করেছিল। যুদ্ধের অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল কিছু রাজনৈতিক ও সামাজিক বিপ্লব ঘটানো, বিশেষত রাশিয়ার স্বৈরাচারী শাসনকে উৎখাত করা। যদিও এই যুদ্ধের প্রাথমিক লক্ষ্য ছিল রাজনৈতিক ভারসাম্য স্থাপন, প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শেষে দেখা যায় যে ইউরোপের মানচিত্র ব্যাপকভাবে পুনর্গঠিত হয় এবং নতুন রাষ্ট্রগুলোর উত্থান ঘটে।
১. সাম্রাজ্যবাদ ও ঔপনিবেশিক প্রতিযোগিতাঃ
১৯ শতকের শেষ এবং ২০ শতকের শুরুর দিকে ইউরোপীয় শক্তিগুলোর মধ্যে সাম্রাজ্যবাদী প্রতিযোগিতা প্রবল ছিল। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ইতিহাস অনুযায়ী, ব্রিটেন, ফ্রান্স, জার্মানি, এবং অস্ট্রিয়া-হাঙ্গেরি বিশ্বে নিজেদের প্রভাব বিস্তারে লিপ্ত ছিল। আফ্রিকা এবং এশিয়ার উপনিবেশ নিয়ে এই দেশগুলোর মধ্যে তীব্র প্রতিযোগিতা চলছিল, যার ফলে সামরিক উত্তেজনা বৃদ্ধি পায়।
২. জাতীয়তাবাদঃ
ইউরোপের বিভিন্ন জাতি নিজেদের স্বাধীনতা ও জাতীয়তাবাদী অধিকার নিয়ে লড়াই করছিল। বিশেষত বলকান অঞ্চল এবং অস্ট্রিয়া-হাঙ্গেরির মতো বহুজাতিক সাম্রাজ্যে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে বিদ্বেষ বেড়ে যাচ্ছিল। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ইতিহাস এই জাতীয়তাবাদের তীব্রতাকে অন্যতম প্রধান চালিকাশক্তি হিসেবে চিহ্নিত করে।
৩. সামরিক জোট ও অস্ত্র প্রতিযোগিতাঃ
যুদ্ধের আগে ইউরোপের প্রধান শক্তিগুলো দুটি প্রধান সামরিক জোট গঠন করেছিল। একদিকে ছিল ট্রিপল অ্যালায়েন্স, যার সদস্য ছিল জার্মানি, অস্ট্রিয়া-হাঙ্গেরি, এবং ইতালি। অন্যদিকে ছিল এন্টেন্তে, যার মধ্যে ছিল ব্রিটেন, ফ্রান্স, এবং রাশিয়া। এই জোটগুলোর মধ্যে চলমান প্রতিদ্বন্দ্বিতা এবং সামরিক প্রতিযোগিতা যুদ্ধের পথ প্রশস্ত করে।
অস্ত্র প্রতিযোগিতাও ছিল যুদ্ধের আরেকটি কারণ। ইউরোপের প্রধান শক্তিগুলো নিজেদের সামরিক বাহিনী শক্তিশালী করতে নতুন অস্ত্র তৈরি করছিল। বিশেষ করে, জার্মানি এবং ব্রিটেনের মধ্যে নৌবাহিনী প্রতিযোগিতা তীব্র হয়েছিল, যা দুই দেশের মধ্যে সামরিক উত্তেজনা বাড়িয়ে দেয়।
৪. বলকান সংকট: ইউরোপের ‘বারুদ ঢিবি’
বলকান অঞ্চল বহুদিন ধরেই ইউরোপের শক্তিধর দেশগুলোর জন্য একটি উত্তেজনাপূর্ণ এলাকা ছিল। ১৯১২-১৯১৩ সালের বলকান যুদ্ধগুলির পর বলকান অঞ্চলে উত্তেজনা বাড়তে থাকে। বলকান সংকট মূলত রাশিয়া এবং অস্ট্রিয়া-হাঙ্গেরির মধ্যে প্রভাব বিস্তারের লড়াইয়ের ফল। সার্বিয়ার সামরিক শক্তির বৃদ্ধি এবং জাতীয়তাবাদী আন্দোলন এই অঞ্চলে যুদ্ধের পথ তৈরি করে।
৫. আর্চডিউক ফ্রাঞ্জ ফার্দিনান্দের হত্যাঃ
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের মূল ট্রিগার ছিল ১৯১৪ সালের ২৮ জুন অস্ট্রো-হাঙ্গেরিয়ান সিংহাসনের উত্তরাধিকারী আর্চডিউক ফ্রাঞ্জ ফার্দিনান্দের হত্যা। সার্বিয়ান জাতীয়তাবাদী গ্যাভ্রিলো প্রিন্সিপের হাতে এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়। এর পরপরই অস্ট্রিয়া-হাঙ্গেরি সার্বিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে, এবং এই যুদ্ধ দ্রুত ইউরোপের বাকি দেশগুলোতেও ছড়িয়ে পড়ে।
১৯১৪ সাল: যুদ্ধের শুরুঃ
যুদ্ধের প্রথম বছর ছিল বিশেষভাবে উত্তপ্ত। জার্মানি শ্লাইফেন পরিকল্পনা নামে একটি দ্রুত আক্রমণাত্মক কৌশল গ্রহণ করেছিল, যার মাধ্যমে তারা প্রথমে ফ্রান্সকে পরাজিত করতে চেয়েছিল এবং তারপর রাশিয়ার দিকে মনোনিবেশ করতে চেয়েছিল। কিন্তু ফ্রান্স ও ব্রিটেনের মিত্র বাহিনী তাদের প্রতিরোধ করায় জার্মানির পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়।
১৯১৫-১৯১৬: ভার্দুন ও সোনের যুদ্ধঃ
১৯১৬ সালে, জার্মানরা ফ্রান্সের ভার্দুন শহরে ব্যাপক আক্রমণ চালায়, যা ইতিহাসে “ভার্দুন মাংস পেষকদন্ত” নামে পরিচিত। এই যুদ্ধটি ১০ মাস ধরে চলেছিল এবং এতে প্রায় ২ মিলিয়ন লোক হতাহত হয়েছিল। এর সাথে ব্রিটিশ বাহিনীও জার্মানদের বিরুদ্ধে সোনের যুদ্ধ চালিয়েছিল, যেখানে শত শত হাজার সৈন্য প্রাণ হারায়।
১৯১৭: যুক্তরাষ্ট্রের অংশগ্রহণঃ
১৯১৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধে প্রবেশ প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ইতিহাসে একটি বড় ঘটনা হিসেবে বিবেচিত হয়, কারণ এর ফলে মিত্রশক্তির সামরিক শক্তি উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পায়।
১৯১৮: যুদ্ধের সমাপ্তিঃ
১৯১৮ সালের শেষদিকে, জার্মানি এবং তার মিত্রদের সামরিক শক্তি ক্ষয়িষ্ণু হতে থাকে এবং ১১ নভেম্বর, ১৯১৮ সালে যুদ্ধ আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ হয়। জার্মানি মিত্রবাহিনীর সামনে আত্মসমর্পণ করে এবং কমপিয়েনের অস্ত্রবিরতি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ফলে ইউরোপের রাজনৈতিক মানচিত্রে ব্যাপক পরিবর্তন আসে। চারটি প্রধান সাম্রাজ্যের পতন ঘটে—অটোমান, অস্ট্রো-হাঙ্গেরিয়ান, জার্মান, ও রাশিয়ান সাম্রাজ্য। বিশ্ব অর্থনীতি বিপর্যস্ত হয়, যুদ্ধের কারণে মানবসম্পদ এবং অবকাঠামোর বিরাট ক্ষতি হয়। যুদ্ধ শেষে ভার্সাই চুক্তির মাধ্যমে জার্মানিকে কঠোর শর্ত মেনে নিতে বাধ্য করা হয়, যা পরবর্তীতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অন্যতম কারণ হয়ে ওঠে। এছাড়াও, জাতিপুঞ্জ (League of Nations) প্রতিষ্ঠিত হয়, যদিও এটি দীর্ঘমেয়াদে সফল হয়নি।
রাজনৈতিক পরিবর্তনঃ
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপ এবং বিশ্ব রাজনীতিতে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন ঘটে, যার ফলে চারটি প্রধান সাম্রাজ্য — রাশিয়ান, অস্ট্রো-হাঙ্গেরিয়ান, জার্মান এবং উসমানীয় সাম্রাজ্য — ধ্বংস হয়ে যায়। রাশিয়ায় ১৯১৭ সালের বিপ্লবের মাধ্যমে বলশেভিকরা ক্ষমতায় আসে, যা সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রতিষ্ঠা ঘটায়। অস্ট্রো-হাঙ্গেরিয়ান সাম্রাজ্য ভেঙে পোল্যান্ড, চেকোস্লোভাকিয়া ও যুগোস্লাভিয়া সহ বেশ কিছু নতুন রাষ্ট্র গঠিত হয়। উসমানীয় সাম্রাজ্য ভেঙে তুরস্ক, ইরাক এবং সিরিয়ার মতো দেশগুলো উদ্ভব ঘটে, যা ব্রিটেন ও ফ্রান্সের অধীনে আসে। একই সময়ে, জার্মান সাম্রাজ্যের পতনের পর ওয়েইমার প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়, কিন্তু রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং অর্থনৈতিক সংকট পরবর্তীতে নাৎসি জার্মানির উত্থানে সহায়ক হয়।
অর্থনৈতিক প্রভাবঃ
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ফলে ইউরোপের অর্থনীতি ব্যাপকভাবে ধ্বংস হয়। যুদ্ধকালীন সময়ে অধিকাংশ দেশই বিপুল ঋণে ডুবে যায়, এবং তাদের শিল্প, অবকাঠামো এবং অর্থনৈতিক কাঠামো ভেঙে পড়ে। বিশেষ করে পরাজিত দেশগুলোর অর্থনীতি চরম দুরবস্থায় পড়ে। জার্মানির উপর ভার্সাই চুক্তির মাধ্যমে বিশাল ক্ষতিপূরণের শর্ত আরোপ করা হয়, যা তাদের অর্থনীতিকে পুরোপুরি বিপর্যস্ত করে। ১৯২০-এর দশকে জার্মানি মারাত্মক মুদ্রাস্ফীতির মুখোমুখি হয়, এবং জনগণের জীবনযাত্রার মান উল্লেখযোগ্যভাবে নিচে নেমে আসে। এই অর্থনৈতিক সংকট পরবর্তীতে হিটলারের উত্থান এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রস্তুতি গড়ে তোলে। অন্যদিকে, ব্রিটেন ও ফ্রান্স যুদ্ধের পর ঔপনিবেশিক সম্পদ ব্যবহার করে অর্থনীতি পুনর্গঠনের চেষ্টা করলেও, তা অত্যন্ত ধীর গতিতে অগ্রসর হয়।
আরও জানুনঃ প্রথম বিশ্বযুদ্ধের প্রধান ফলাফল ও দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন
সামাজিক পরিবর্তনঃ
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ইতিহাস আরও জানায় যে, নারীরা কলকারখানা এবং অন্যান্য সরকারি কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে শুরু করে, যা সমাজে নতুন রূপান্তর ঘটায়। যুদ্ধে প্রায় ৮.৫ মিলিয়ন মানুষ নিহত হয়, এবং ব্যাপক প্রাণহানির পাশাপাশি সামাজিক কাঠামোতেও পরিবর্তন আসে। পুরুষরা যখন সামরিক বাহিনীতে যোগ দেয়, নারীরা প্রথমবারের মতো কলকারখানা, স্বাস্থ্যসেবা এবং সরকারি কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে শুরু করে। এতে নারীরা সমাজে নতুন ভূমিকা এবং অধিক স্বাধিকার দাবি করার সুযোগ পান, যা পরবর্তীতে তাদের ভোটাধিকার এবং অন্যান্য সামাজিক অধিকার অর্জনে সহায়ক হয়। যুদ্ধে আহত বা মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা এত বেশি ছিল যে যুদ্ধ-পরবর্তী সমাজে তাদের পুনর্বাসন একটি বড় চ্যালেঞ্জে পরিণত হয়। একই সাথে, “লস্ট জেনারেশন” নামে পরিচিত একটি প্রজন্ম গড়ে ওঠে, যারা যুদ্ধের ভয়াবহতার পর তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে হতাশ হয়ে পড়ে।
ভার্সাই চুক্তিঃ
১৯১৯ সালে স্বাক্ষরিত ভার্সাই চুক্তি প্রথম বিশ্বযুদ্ধের আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি ঘোষণা করে, কিন্তু এটি জার্মানির জন্য অত্যন্ত কঠোর শর্ত আরোপ করে। চুক্তি অনুযায়ী, জার্মানিকে যুদ্ধের সম্পূর্ণ দায়ভার নিতে হয় এবং বিশাল পরিমাণ ক্ষতিপূরণ প্রদানে বাধ্য করা হয়, যা তাদের অর্থনীতিকে ভেঙে ফেলে। জার্মানির সেনাবাহিনী কঠোরভাবে সীমাবদ্ধ করা হয় এবং তাদের উপনিবেশগুলো মিত্রশক্তির মধ্যে বিভাজন করা হয়। এসব শর্তের কারণে জার্মান জনগণের মধ্যে তীব্র অসন্তোষ এবং জাতীয় অপমানবোধ জন্মায়। এই চুক্তিকে অনেকেই “জার্মানির উপর অন্যায়” বলে মনে করেছিল, যা নাৎসি পার্টির উত্থান এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সূচনার অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
লীগ অব নেশনসঃ
এই প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর বিশ্ব শান্তি বজায় রাখার লক্ষ্যে লীগ অব নেশনস গঠন করা হয়, যা প্রথম আন্তর্জাতিক সংস্থা হিসেবে বিশ্বব্যাপী শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষার জন্য কাজ করেছিল। এর প্রধান উদ্দেশ্য ছিল ভবিষ্যতে যেকোনো যুদ্ধ বা আন্তর্জাতিক সংঘাতের ঝুঁকি কমানো এবং আলোচনা ও কূটনৈতিক সমাধানের মাধ্যমে সমস্যা মোকাবিলা করা। তবে, এর কার্যকারিতা সীমিত ছিল। বিশেষ করে, যুক্তরাষ্ট্র সদস্য না হওয়া এবং অন্যান্য বড় শক্তিগুলোর অবহেলার কারণে লীগ অব নেশনস দ্রুত দুর্বল হয়ে পড়ে। এর ব্যর্থতা চূড়ান্তভাবে প্রকাশিত হয় যখন ১৯৩৯ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়, এবং এটি সংঘাত প্রতিরোধে সম্পূর্ণ অক্ষম প্রমাণিত হয়। পরবর্তীতে, লীগ অব নেশনস বিলুপ্ত হয় এবং তার পরিবর্তে জাতিসংঘ (United Nations) প্রতিষ্ঠিত হয়।
আরও জানুনঃ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ইতিহাস
প্রথম বিশ্বযুদ্ধ বিশ্ব ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ বাঁক পরিবর্তনকারী ঘটনা। এর ফলে ইউরোপ এবং বিশ্বজুড়ে রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিবর্তন আসে। যুদ্ধের সমাপ্তির পরেও এর ফলাফল থেকে অনেক সমস্যার সৃষ্টি হয়, যা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মূল কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম।
[…] […]
[…] […]
[…] আরও জানুন – প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ইতিহাস […]