সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:৫২ অপরাহ্ন
শিরোনাম ::

এডলফ হিটলার এর জীবনের শেষ মুহূর্তগুলোঃ একটি নজরকাড়া অধ্যায়

রিপোর্টার নাম / ২৬৫ বার দেখেছে
আপডেট : সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:৫২ অপরাহ্ন
এডলফ হিটলার এর জীবনের সংকটময় শেষ মুহূর্তগুলো কেমন ছিলো।

হিটলারের জীবনের শেষ মুহুর্তগুলো

১৯৪৫ সালের শুরুর দিকটা ছিল এডলফ হিটলার এর জীবনের সবচেয়ে সংকটময় সময়। যুদ্ধের মাঠে মিত্রবাহিনীর সামনে জার্মানির অবস্থা ভয়াবহ হতে শুরু করেছিল। রাশিয়ান বাহিনী এবং মিত্র বাহিনীর সৈন্যরা একের পর এক জার্মান শহর দখল করতে করতে বার্লিনের দিকে এগিয়ে আসছিল। জানুয়ারির দিকে রাশিয়ান বাহিনী পোল্যান্ড অতিক্রম করে পূর্ব জার্মানিতে প্রবেশ করে, এবং বার্লিনের উপকণ্ঠে বোমাবর্ষণ শুরু করে। হিটলার তার জন্য প্রস্তুত বাঙ্কারে ফিরে আসেন, যেখান থেকে তিনি তার জীবনের শেষ সময়গুলি অতিবাহিত করেন।

বার্লিনের পতনের আগমুহূর্তঃ

এপ্রিলের শুরুর দিকে, প্রায় ২.৫ মিলিয়ন রাশিয়ান সৈন্য বার্লিনে এসে উপস্থিত হয়। এক সপ্তাহের মধ্যেই তারা হিটলারের বাঙ্কারের খুব কাছাকাছি পৌঁছে যায়। ২৮শে এপ্রিল, হিটলার ফিল্ড মার্শাল কাইটেলকে একটি বার্তা পাঠান: “এখনো বার্লিনের মুক্তির আশায় আছি। ওয়েংক কোথায়? হেনরিচির খবর কী?” কিন্তু এই বার্তার কোনো উত্তর আসেনি। ওয়েংকের বাহিনী ইতিমধ্যে নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছিল, এবং হেনরিচি পশ্চিমে পিছু হটেছিলেন। ২৮ ও ২৯শে এপ্রিলের মধ্যে বার্লিনের পরিস্থিতি চরম আকার ধারণ করে, এবং বাঙ্কার থেকে রাশিয়ানদের বোমার শব্দ স্পষ্ট শোনা যাচ্ছিল।

আরও জানুনঃ যদি আডলফ হিটলার-এর অস্তিত্ত্বই না থাকতো, তাহলে ইতিহাসের কি কোনো পরিবর্তন হতো?

ইভা ব্রাউনকে বিয়েঃ

পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটলে, হিটলার বুঝতে পারেন যে জয়ের আশা আর নেই। তিনি তার সহকারী ট্রুডল জাঙ্গকে নিজের সম্পত্তির উইল হস্তান্তর করেন এবং রাজনৈতিক নির্দেশাবলী দিয়ে যান। তারপর তিনি তার দীর্ঘদিনের সঙ্গী ইভা ব্রাউনকে বিয়ের সিদ্ধান্ত নেন। ২৯শে এপ্রিল, রাত তিনটায় তাদের বিয়ে সম্পন্ন হয়। বিয়ের পর হিটলার একটি ছোট বিবাহোত্তর উদযাপন আয়োজন করেন। উপস্থিত ছিলেন তার ঘনিষ্ঠ সহযোগীরা, যেমন মার্টিন বোরম্যান ও গের্দা ক্রিস্টিয়ান।

পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটলে ইভা ব্রাউনকে বিয়ের সিদ্ধান্ত নেন

বিয়ের উদযাপন শেষে হিটলার তার ঘনিষ্ঠদের উদ্দেশ্যে একটি ছোট বক্তব্য দেন। তিনি তার জীবনের কিছু সুন্দর মুহূর্ত স্মরণ করেন এবং যুদ্ধে জার্মানির পরাজয়ের কথা মেনে নেন। তবে তিনি রাশিয়ান বাহিনীর হাতে ধরা দিতে অস্বীকৃতি জানান এবং ঘোষণা করেন যে তিনি আত্মহত্যা করবেন।

হিটলার আত্মহত্যার প্রস্তুতিঃ

পরের দিন হিটলার ও ইভা ব্রাউন আত্মহত্যার প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন। হিটলার তার সব গোপন নথি পুড়িয়ে ফেলতে তার দেহরক্ষীকে নির্দেশ দেন। ৩০শে এপ্রিল, ভোর হওয়ার আগে তিনি তার আদরের কুকুর ব্লুন্ডিকে বিষ প্রয়োগে হত্যা করেন। তারপর দুপুরে হিটলার ও ইভা শেষবারের মতো তাদের ঘনিষ্ঠদের বিদায় জানান। বেলা ৩টার দিকে, হিটলার ও ইভা তাদের কক্ষে প্রবেশ করেন এবং দরজা বন্ধ করে দেন।

কিছুক্ষণের মধ্যে একটি গুলির শব্দ শোনা যায়। ভেতরে প্রবেশ করে দেখা যায়, হিটলার ও ইভা দুজনেই মৃত। ইভা সায়ানাইড খেয়ে আত্মহত্যা করেছিলেন, আর হিটলার সায়ানাইড গ্রহণের পাশাপাশি নিজের পিস্তল দিয়ে মাথায় গুলি করেছিলেন।

আরও জানুনঃ   হিটলারের জীবনী ইতিহাসের এক বিভীষিকাময় অধ্যায়

মৃতদেহের ব্যবস্থাঃ

হিটলার মৃত্যুর আগে নির্দেশ দিয়ে গিয়েছিলেন, তার এবং ইভার মৃতদেহ যেন পুড়িয়ে ফেলা হয়। নির্দেশমতো, তার দেহরক্ষী অত্ত গুন্সে এবং অ্যাস্কামান মৃতদেহগুলোকে পেট্রোল ঢেলে আগুনে পুড়িয়ে দেন। এভাবে একনায়ক এডলফ হিটলার, যিনি ভেবেছিলেন তার রাজত্ব ১০০০ বছর স্থায়ী হবে, মাত্র ১২ বছরে শেষ হয়ে গেলেন।

রাশিয়ান বাহিনী ২ মে বাঙ্কারে প্রবেশ করে এবং হিটলারের মৃতদেহের সন্ধানে তল্লাশি চালায়। ৪ মে, একটি গর্ত থেকে হিটলার ও ইভার অগ্নিদগ্ধ মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। পরে দন্ত পরীক্ষা করে নিশ্চিত হওয়া যায় যে সেটি হিটলারের দেহ।

মৃতদেহগুলো কড়া নিরাপত্তার সাথে মস্কোতে নিয়ে যাওয়া হয় এবং মাগডিবার্গের একটি প্যারেড গ্রাউন্ডের নিচে সমাহিত করা হয়। ১৯৭০ সালে রাশিয়ান সরকার সেই মৃতদেহগুলো তুলে পুনরায় পুড়িয়ে দেয় এবং ছাইগুলো নদীতে ফেলে দেয়।

আরও জানুনঃ হিটলারের অজানা ১০টি বিস্ময়কর তথ্য

 


আপনার মতামত লিখুন :

3 responses to “এডলফ হিটলার এর জীবনের শেষ মুহূর্তগুলোঃ একটি নজরকাড়া অধ্যায়”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এর রকম আরো পোষ্ট