মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:১৯ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::

হ্যালোইন ইতিহাস কি? উদযাপনের পেছনের উদ্দেশ্য কি?

রিপোর্টার নাম / ১১১ বার দেখেছে
আপডেট : মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:১৯ পূর্বাহ্ন
"হ্যালোইন ইতিহাস" Halloween কেন উদযাপন করা হয়।
"হ্যালোইন ইতিহাস" Halloween কেন উদযাপন করা হয়।

Halloween উদযাপনের পেছনের ইতিহাস কি

হ্যালোইন ইতিহাস

হ্যালোইন এর প্রাচীন উৎস মূলত প্রাচীন সেল্টিক জাতির উদযাপন সামহেন থেকে উৎপত্তির । প্রায় ২,০০০ বছর আগে বর্তমান আয়ারল্যান্ড, গ্রেট ব্রিটেন এবং উত্তর ফ্রান্সে বসবাসকারী সেল্টরা ১লা নভেম্বর নববর্ষ পালন করত, যা গ্রীষ্মের সমাপ্তি এবং ঠান্ডা শীতের শুরু ঘোষণা করত। এই সময়টি ছিল ফসল কাটার সমাপ্তি এবং শীতের দীর্ঘ অন্ধকার দিনগুলোর সূচনা, যা মৃত্যুর প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হত। সেল্টদের বিশ্বাস অনুযায়ী, নববর্ষের আগের রাতে জীবিত এবং মৃতদের জগতের মাঝে থাকা সীমানা মুছে যেত। ৩১শে অক্টোবর, তারা এই বিশ্বাস থেকে উদযাপন করত যে মৃতদের আত্মারা পৃথিবীতে ফিরে আসবে। এই ভূতেরা দুর্ভাগ্য ও ফসল নষ্ট করার আশঙ্কা তৈরি করলেও, অন্য জগতের আত্মারা উপস্থিত হলে ড্রুইড বা পুরোহিতদের জন্য ভবিষ্যদ্বাণী করাও সহজ হতো। ড্রুইডদের এই ভবিষ্যদ্বাণীগুলি শীতের দীর্ঘ ও কঠিন সময়ে সেল্টদের কাছে সান্ত্বনার এক গুরুত্বপূর্ণ উৎস ছিল।

এই দিনটিকে সম্মান জানাতে ড্রুইডরা বড় পবিত্র আগুন জ্বালাত, যার চারপাশে মানুষ একত্রিত হয়ে সেল্টিক দেবতাদের উদ্দেশ্যে ফসল ও পশু উৎসর্গ করত। তারা প্রাণীদের মাথা ও চামড়া দিয়ে তৈরি পোশাক পরে নিজেরা একে অপরের ভবিষ্যৎ জানার চেষ্টা করত। উৎসব শেষে তারা পবিত্র আগুন থেকে তাদের বাড়ির চুল্লি প্রজ্বালিত করত, যা শীতকালে সুরক্ষার প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হতো।

৪৩ খ্রিস্টাব্দে রোমান সাম্রাজ্য সেল্টিক অঞ্চলের অধিকাংশ দখল করে নেয়, এবং সামহেনের সঙ্গে দুটি রোমান উৎসব যুক্ত হয়। প্রথমটি ছিল ফেরালিয়া, যা ছিল মৃতদের স্মরণে একটি ছুটি। দ্বিতীয়টি ছিল রোমান দেবী পোমোনার উৎসব, যিনি ফল ও গাছের দেবী হিসেবে পরিচিত ছিলেন। পোমোনার প্রতীক ছিল আপেল, যা সামহেন উৎসবে অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল, এবং এই ঐতিহ্য থেকেই হ্যালোইনের জনপ্রিয় আপেল ধরার খেলার সূচনা।

হ্যালোইন উদযাপনের পেছনের উদ্দেশ্যঃ

আজকের হ্যালোইন উদযাপনে মূলত একাধিক ঐতিহ্যের সংমিশ্রণ দেখা যায়। প্রাচীন হ্যালোইনের প্রাথমিক উদ্দেশ্য ছিল:

  • মৃতদের স্মরণ: প্রাচীন বিশ্বাস অনুযায়ী মৃত আত্মাদের স্মরণ এবং সম্মান জানানো।
  • অন্ধকার ও শীতের সূচনা: নভেম্বরের শুরু মানে অন্ধকারের আগমন এবং শীতকাল, যা মানবজীবনের সঙ্গে প্রকৃতির গভীর সম্পর্ককে চিহ্নিত করে।
  • ভূত-প্রেতদের ভয় দেখানো: বিভিন্ন ভয়ঙ্কর পোশাক ও মুখোশ পরা হত ভূত-প্রেতদের দূরে রাখতে।
  • সামাজিক বন্ধন জোরদার করা: বন্ধু-পরিবার মিলে মিলিত হয়ে খাবার ভাগাভাগি করা এবং সম্পর্ক জোরদার করাও একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক ছিল।

আধুনিক হ্যালোইনের রূপঃ

বর্তমানে হ্যালোইন মূলত একটি বিনোদনের উৎসব, যেখানে বাচ্চারা বাড়ি বাড়ি ঘুরে ক্যান্ডি সংগ্রহ করে এবং দোকানগুলোতে হ্যালোইন সংক্রান্ত নানা পণ্য বিক্রি হয়। এটি কেবল একটি ছুটির দিন নয়, বরং একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায়িক সময়।

হ্যালোইন এবং কুমড়ো: রহস্যময় গল্পঃ

হ্যালোইনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রতীক কুমড়ো, যাকে খোদাই করে তৈরি করা হয় জ্যাক-ও-লণ্ঠন (Jack-o’-lantern)। প্রাচীন আয়ারল্যান্ড ও স্কটল্যান্ডের মানুষ প্রথমে শালগম বা অন্য সবজি খোদাই করে লণ্ঠন বানাতো। যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছানোর পর তারা সহজলভ্য কুমড়ো ব্যবহার শুরু করে এবং ধীরে ধীরে এটি হ্যালোইনের অন্যতম প্রধান প্রতীক হয়ে ওঠে।

হ্যালোইন এবং কুমড়ো রহস্যময় গল্প

জ্যাক-ও-লণ্ঠনের পুরাণঃ

লোককাহিনি অনুযায়ী, জ্যাক নামে এক ব্যক্তি মন্দ আত্মাকে প্রতারণা করে একটি চিরস্থায়ী প্রদীপ হাতে নিয়ে পৃথিবীজুড়ে ঘুরে বেড়াতে বাধ্য হয়েছিল। এ থেকেই কুমড়ো খোদাই করে লণ্ঠন বানানোর রীতি প্রচলিত হয়।

মুখোশ ও ভুতুড়ে পোশাকের ঐতিহ্যঃ

ভুতুড়ে পোশাক পরা এবং মুখোশ ব্যবহার করা হ্যালোইনের আরেকটি আকর্ষণীয় রীতি। এই পোশাকের উদ্দেশ্য ছিল ভূত-প্রেতদের ভয় দেখানো। ১৯ শতকের শেষ দিকে স্কটল্যান্ডে এই ঐতিহ্যের সূচনা ঘটে, যা ক্রমে পশ্চিমা বিশ্বে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে।

হ্যালোইন সম্পর্কে কিছু মজার তথ্য:

  • মিষ্টির প্রচলন: মধ্যযুগে অল সেন্টস ডে উপলক্ষে বাচ্চারা মিষ্টি সংগ্রহ করত, যা আজকের ট্রিক-অর-ট্রিট প্রথার সূচনা করে।
  • কালো বিড়াল: কালো বিড়ালকে ভয়ঙ্কর প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করা হলেও এটি আসলে আশ্রয় ও সমৃদ্ধির প্রতীক ছিল।
  • জম্বি প্যারেড: জম্বি সাজে রাস্তায় বের হওয়া আজ হ্যালোইনের এক অন্যতম জনপ্রিয় রীতি।
  • সাংস্কৃতিক বিনিময়: কোরিয়া ও জাপানে হ্যালোইন এখন একটি সংস্কৃতির বিনিময় এবং মজার উৎসবে পরিণত হয়েছে।

হ্যালোইন উদযাপন এখন শুধুমাত্র ভয়ের উৎসব নয় বরং ইতিহাস, সংস্কৃতি এবং মানুষের সংমিশ্রণের এক অনন্য উদাহরণ। বিভিন্ন দেশ ও সংস্কৃতি হ্যালোইনকে নিজেদের মতো করে উদযাপন করছে এবং এটি একটি বৈশ্বিক উৎসবে রূপান্তরিত হয়েছে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এর রকম আরো পোষ্ট