ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলকে বোঝাতে ব্যবহৃত “সেভেন সিস্টার্স” বা সাত বোনের রাজ্যগুলো নিয়ে আলোচনা করতে গেলে বাংলাদেশের ভূমিকা এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে দাঁড়ায়। সেভেন সিস্টার্স বলতে বোঝায় ভারতের সাতটি রাজ্য – আসাম, মেঘালয়, নাগাল্যান্ড, মণিপুর, ত্রিপুরা, মিজোরাম, এবং অরুণাচল প্রদেশ। এই অঞ্চলের ভৌগোলিক এবং রাজনৈতিক গুরুত্ব অনেক, আর এর সাথে বাংলাদেশের একটি কৌশলগত সম্পর্ক রয়েছে।
বাংলাদেশ ও সেভেন সিস্টার্সের মধ্যে প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ স্থলসীমান্ত সংযোগ রয়েছে। এই সীমান্তটি আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম রাজ্যের সঙ্গে ভাগ করে নেওয়া হয়েছে, যা দুই দেশের মধ্যে ভৌগোলিক যোগাযোগের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
বাংলাদেশের সাথে সেভেন সিস্টার্সের এই সম্পর্ক শুধুমাত্র ভৌগোলিক নয়, এটি বাণিজ্য, নিরাপত্তা, এবং সংস্কৃতি ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ। এই সীমান্ত অঞ্চলে অবৈধ পাচার ও বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন অতীতে গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ সরকারের বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন দমনে কড়া অবস্থান ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের স্থিতিশীলতা বৃদ্ধিতে বড় ভূমিকা রেখেছে।
আরও জানুনঃ সেভেন সিস্টার্স কি?
“সেভেন সিস্টার্স” নামটি প্রথম জনপ্রিয় হয় ১৯৭০-এর দশকে, যখন এই অঞ্চলের সাতটি রাজ্য ভারতের মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন ছিল। একে “সেভেন সিস্টার্স” বলে অভিহিত করার পেছনে ছিল অঞ্চলটির সংস্কৃতি, সমাজ, এবং রাজনৈতিক পৃথকত্ব। এই নামটি ভারতে একসময় ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হলেও বর্তমানে এটি কিছুটা অপ্রচলিত হয়েছে। তবে বাংলাদেশে এখনও এই শব্দবন্ধটি বহুল প্রচলিত এবং এটি ব্যবহার করে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর কথা বোঝানো হয়।
বাংলাদেশের সাথে সেভেন সিস্টার্সের একটি ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। ভারতের সাথে বাংলাদেশের ৪,০৯৬ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্তের বড় অংশটি সেভেন সিস্টার্সের রাজ্যগুলোর সাথে সংযুক্ত। বিশেষ করে আসাম, ত্রিপুরা, মেঘালয় ও মিজোরামের সাথে বাংলাদেশের ভৌগোলিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে।
দুই দেশের মধ্যে পণ্য আদান-প্রদান এই অঞ্চলের অর্থনীতিতে একটি বড় প্রভাব ফেলেছে। এছাড়া, বাংলাদেশের বন্দরগুলোও সেভেন সিস্টার্সের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর ভারতের এই অঞ্চলগুলোকে সামুদ্রিক বাণিজ্যের সঙ্গে সংযুক্ত করেছে। ফলে এই অঞ্চলের অর্থনীতি গতিশীল হয়েছে এবং ভারতের বাকি অংশের সাথে তাদের যোগাযোগের পথ আরও সুগম হয়েছে।
সেভেন সিস্টার্সের রাজ্যগুলোতে অতীতে বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীগুলোর কার্যকলাপের কেন্দ্র ছিল। বাংলাদেশের ভূমি এই গোষ্ঠীগুলোর জন্য নিরাপদ আশ্রয়স্থল ছিল, যেখান থেকে তারা ভারত সরকারের বিরুদ্ধে তাদের সশস্ত্র আন্দোলন পরিচালনা করত। তবে শেখ হাসিনা সরকারের অধীনে বাংলাদেশ এই গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে এবং তাদের কর্মকাণ্ড দমন করেছে। এর ফলে আসামের মতো রাজ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, যা অতীতে উত্তেজনা ও সহিংসতার কেন্দ্র ছিল।
আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা একাধিকবার প্রকাশ্যে বলেছেন, বাংলাদেশ বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীগুলোকে ভারতের হাতে তুলে দিয়েছে বলেই আসাম আজ শান্তিপূর্ণ এবং রাজ্যের মানুষ নিরাপদে থাকতে পারছে।
আরও জানুনঃ ভারতের সেভেন সিস্টার্স এর ইতিহাস
সেভেন সিস্টার্সের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক কেবলমাত্র নিরাপত্তার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এই অঞ্চলের বাণিজ্যিক এবং অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেও বাংলাদেশের বিশাল ভূমিকা রয়েছে। চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর ব্যবহার করার সুযোগ দিয়ে বাংলাদেশ সেভেন সিস্টার্সের রাজ্যগুলোর জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক পথ খুলে দিয়েছে। এই বন্দরগুলো সেভেন সিস্টার্সের সামুদ্রিক বাণিজ্যকে নতুন দিগন্তে নিয়ে গেছে, যা ভারতের মূল ভূখণ্ডের সাথে তাদের যোগাযোগকে সহজ করেছে।
বাংলাদেশ এবং সেভেন সিস্টার্সের মধ্যে সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক সম্পর্কও গভীর। এই অঞ্চলে বসবাসকারী অনেক মানুষ বাংলাদেশ থেকে আসা অভিবাসী। এর ফলে সাংস্কৃতিক বিনিময় এবং ধর্মীয় ও সামাজিক সম্পর্কও গড়ে উঠেছে। মেঘালয়, ত্রিপুরা এবং মিজোরামে অনেক বাংলাদেশি অভিবাসী রয়েছেন, যারা স্থানীয় সমাজের সাথে মিশে গেছেন এবং এখানকার অর্থনৈতিক কার্যক্রমে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন।
বাংলাদেশের সাথে ভারতের সেভেন সিস্টার্স অঞ্চলের সম্পর্ক কৌশলগত, অর্থনৈতিক এবং সামাজিক স্তরে গভীরভাবে সংযুক্ত। দুই দেশের মধ্যে সঠিক সমঝোতা ও সহযোগিতা বজায় রাখার মাধ্যমে সেভেন সিস্টার্সের রাজ্যগুলোতে স্থিতিশীলতা, শান্তি এবং উন্নয়ন অব্যাহত রাখতে বাংলাদেশ একটি বড় ভূমিকা পালন করেছে।
[…] :: ভারতে ‘ সেভেন সিস্টার্স ’ কিংবা সাত বো… সেভেন সিস্টার্স কি ? সেভেন সিস্টার্স […]