সেভেন সিস্টার্স শব্দটি শুনলেই মনে হয় যেনো সাতটি বোনের গল্প। তবে বাস্তবে এটি ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সাতটি রাজ্যের একটি সম্মিলিত পরিচিতি। এই সাতটি রাজ্য হলো – অরুণাচল প্রদেশ, আসাম, মণিপুর, মেঘালয়, মিজোরাম, নাগাল্যান্ড এবং ত্রিপুরা। এই সাতটি রাজ্য মিলিয়ে একত্রে ‘সেভেন সিস্টার্স’ নামে পরিচিত।
ভারতের এই অঞ্চলের প্রকৃতি, সংস্কৃতি এবং জীবনযাত্রা অন্য যেকোনো অঞ্চলের থেকে ভিন্ন। পাহাড়ি এলাকা, সবুজ বনানী, এবং প্রাচীন সংস্কৃতির মিলনে সেভেন সিস্টার্স একটি মনোমুগ্ধকর স্থান।
ভারতের এই অঞ্চলের ‘সেভেন সিস্টার্স’ নামটি প্রথম জনপ্রিয় হয় ১৯৭২ সালে। এই সময় ত্রিপুরা, মণিপুর এবং মেঘালয় ভারতের পূর্ণাঙ্গ রাজ্য হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। এর পরই টাইমস অফ ইন্ডিয়ার একজন সাংবাদিক, জ্যোতি প্রসাদ শইকিয়া, এই অঞ্চলের সাতটি রাজ্যকে ‘সেভেন সিস্টার্স’ হিসেবে উল্লেখ করেন। তিনি এক প্রতিবেদনে লেখেন, “এই সাতটি রাজ্য পরস্পরের ওপর নির্ভরশীল, একে অপরের সঙ্গে সম্পর্কিত, যেন সাতটি বোন একসাথে জীবনযাপন করছে।” এরপর এই নামটি দ্রুত জনপ্রিয়তা লাভ করে এবং এই সাতটি রাজ্যকে ‘সেভেন সিস্টার্স’ বলা হতে থাকে।
আরও জানুনঃ ভারতে ‘ সেভেন সিস্টার্সের ’ বা সাত বোনের সংসারে বাংলাদেশের ভূমিকা কী?
ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ইতিহাস দীর্ঘ এবং বৈচিত্র্যময়। প্রাচীনকালে, এই অঞ্চলটি ছোট ছোট রাজ্য এবং জনপদের সমষ্টি ছিল, যেখানে নাগা, মিজো, মণিপুরী এবং অন্যান্য উপজাতিরা তাদের নিজস্ব সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেছিল। দীর্ঘকাল ধরে এই অঞ্চলটি ভারতের মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন ছিল, এবং ব্রিটিশ শাসনের সময়ও প্রশাসনিকভাবে ভারতের সাথে সরাসরি সংযুক্ত ছিল না। সেভেন সিস্টার্স নামে পরিচিত এই অঞ্চলের ইতিহাস বেশ পুরনো। ব্রিটিশ শাসনের সময় এই অঞ্চল স্বাধীনভাবে টিকে ছিল এবং ভারতের অন্যান্য অংশের সাথে সরাসরি যোগাযোগের অভাব ছিল।
১৯৪৭ সালে ভারত স্বাধীনতা লাভের পর, উত্তর-পূর্বাঞ্চলের এই রাজ্যগুলোকে ভারতের অংশ হিসেবে একত্রিত করা হয়। তবে এখানকার জনগোষ্ঠী ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে অনেক সংগ্রাম করেছে এবং স্বাধীন ভারতেও নিজেদের স্বতন্ত্রতা বজায় রাখতে বিভিন্ন আন্দোলনে অংশ নিয়েছে। ভৌগোলিক অবস্থান এবং সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য সেভেন সিস্টার্সকে ভারতের অন্যান্য অংশ থেকে আলাদা করেছে। এখানকার আদিবাসী জনগোষ্ঠীর বিশেষ ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতি আজও সংরক্ষিত রয়েছে, যা তাদের ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
যদিও ঐতিহাসিকভাবে শাসক এবং আদিবাসী গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষের কেন্দ্রস্থল ছিল, স্বাধীন ভারতের সাথে সংযুক্ত হওয়ার পর এই এলাকায় ধীরে ধীরে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
সেভেন সিস্টার্স এর মোট আয়তন প্রায় ২,৫৫,০০০ বর্গকিলোমিটার, যা ভারতের মোট ভূখণ্ডের প্রায় ৭.৬ শতাংশ। এই বিশাল এলাকাজুড়ে রয়েছে নানা ধরনের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, যেমন উঁচু পাহাড়, গভীর উপত্যকা, ঘন বন, এবং প্রবাহিত নদী। এছাড়াও, এই অঞ্চলে প্রচুর বন্যপ্রাণী ও বিভিন্ন ধরনের উদ্ভিদের বৈচিত্র্য রয়েছে। এই বিশাল এলাকা সমগ্র ভারতবর্ষের ভেতরে যেমন বিশাল তেমনি অন্যান্য দেশের সাথেও এর সংযোগ রয়েছে। বিশেষ করে, বাংলাদেশ এবং মিয়ানমারের সাথে সেভেন সিস্টার্সের বেশ ভালো যোগাযোগ রয়েছে।
সেভেন সিস্টার্সের প্রতিটি রাজ্য তার নিজস্ব প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং বৈচিত্র্য নিয়ে গর্ব করে। অরুণাচল প্রদেশে রয়েছে হিমালয়ের সৌন্দর্য, অসমে ব্রহ্মপুত্র নদীর বিস্তৃতি, এবং মেঘালয়ে রয়েছে উঁচু পাহাড় ও সুন্দর জলপ্রপাত। ত্রিপুরা এবং মিজোরামের সমৃদ্ধ জঙ্গল ও মনোমুগ্ধকর পাহাড়ি অঞ্চল মনোমুগ্ধকর। মণিপুর এবং নাগাল্যান্ডের পাহাড়ি উপত্যকা এবং উষ্ণমণ্ডলীয় বনভূমি অনেক পর্যটককেই আকৃষ্ট করে।
এই সাতটি রাজ্যের মানুষের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য বৈচিত্র্যময় এবং রঙিন। এখানকার জনগোষ্ঠী মূলত বিভিন্ন আদিবাসী সম্প্রদায়ভুক্ত, এবং তাদের প্রত্যেকের নিজস্ব ভাষা, পোশাক, খাদ্যাভ্যাস ও ধর্মীয় বিশ্বাস রয়েছে। মিজোরামের মিজো, নাগাল্যান্ডের নাগা, মণিপুরের মেইতেই এবং মেঘালয়ের খাসি জাতিগোষ্ঠীগুলি তাদের ঐতিহ্যকে এখনো সযত্নে ধরে রেখেছে। এখানকার লোকনৃত্য, উৎসব এবং শিল্পকলা ভারতের সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের এক চমৎকার উদাহরণ।
[…] বোনের সংসারে বাংলাদেশের ভূমিকা কী? সেভেন সিস্টার্স কি ? সেভেন সিস্টার্স এ… বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তিরা: […]