আজকাল মনে হচ্ছে প্রতিটি ধাপে কিছু না কিছু আবিষ্কৃত হচ্ছে, কিন্তু প্রাচীন সভ্যতাগুলি এখনও অনেক রহস্য রেখে গেছে, যা বিজ্ঞানীরা বহু বছর ধরে খুঁজে বের করার চেষ্টা করছেন। এই তথ্যগুলো আপনাকে প্রাচীন যুগের মানুষদের নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখতে সাহায্য করবে।
১. ওয়ারি সভ্যতার মহিলা মদ প্রস্তুতকারকরা
ইনকা সভ্যতার আগেই ওয়ারি সভ্যতা পেরুর আন্দিজ পর্বতমালায় বিকাশ লাভ করেছিল। ২০০৫ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে, ওয়ারি সভ্যতার মদ প্রস্তুতকারকরা মূলত মহিলা ছিলেন। তারা ক্রীতদাস ছিল না, বরং উচ্চবিত্তদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন এবং তাদের সামাজিক মর্যাদা ছিল অত্যন্ত সম্মানজনক। এদের তৈরি অ্যালকোহলযুক্ত পানীয়কে বলা হত “চিচা,” যা মরিচ গাছ এবং ভুট্টা থেকে প্রস্তুত করা হতো। চিচা তৈরি প্রক্রিয়াটি ছিল অত্যন্ত যত্নশীল এবং বিশেষজ্ঞদের নিয়ন্ত্রণে। সেই সময়ের সেরা উৎসবগুলোতে এই পানীয় বিশেষভাবে পরিবেশন করা হত।
আরও জানুনঃ ইতিহাস এখানে জন্মেছিল: বিশ্বের 6টি প্রাচীন শহর
২. ভূমিকম্পে সানক্সিংদুই সভ্যতার স্থানান্তর
সানক্সিংদুই, প্রাচীন চীনের একটি প্রভাবশালী প্রাচীন রহস্য, প্রায় ৩ হাজার বছর আগে হঠাৎ করে অন্তর্ধান করে। ধারণা করা হয়, একটি ভূমিকম্পের কারণে নদীর গতিপথ পরিবর্তিত হয়ে যায়, যার ফলে এই প্রাচীন সভ্যতা মানুষগুলো বাধ্য হয়ে অন্যত্র চলে যায়। সানক্সিংদুই ছিল এক ধনী ও শক্তিশালী সভ্যতা, যা জেড, ব্রোঞ্জ এবং সোনার শিল্পকর্মে সমৃদ্ধ ছিল। এদের অদ্ভুত অন্তর্ধানের পেছনে ভূমিকম্প ছাড়াও কিছু গবেষক যুদ্ধ এবং বন্যার সম্ভাবনাকেও বিবেচনা করে থাকেন।
৩. প্রথমে “বর্বর” কাকে বলা হত?
প্রাচীন গ্রীকরা যারা গ্রীক ভাষা জানত না, তাদের বক্তৃতা বকবকের মতো শোনাত বলে তাদের “বর্বর” বলে ডাকত। “বর্বর” শব্দটি প্রাচীন রোমান সাম্রাজ্যে বিস্তৃতভাবে ব্যবহৃত হতো, তবে তখন শব্দটির অর্থ ছিল সেইসব লোক, যারা গ্রীক বা ল্যাটিন ভাষা জানত না এবং সভ্যতার বাইরে ছিল। পরবর্তী সময়ে, এই শব্দটির নেতিবাচক অর্থ ব্যবহারের মাধ্যমে “অসভ্য” বা “বর্বর” বলে পরিচিতি পায়।
৪. প্রাচীন ভারতে প্লাস্টিক সার্জারি
প্রাচীন ভারতে যোদ্ধারা হেলমেট ব্যবহার করতেন না বলে তারা প্রায়ই আহত হতেন, বিশেষ করে মুখমণ্ডলে আঘাত পেতেন। এ কারণে, সেখানকার চিকিৎসকরা আধুনিক রাইনোপ্লাস্টির মতো নাক পুনর্গঠন পদ্ধতি তৈরি করেন। অনেক লোক যুদ্ধের ফলে তাদের নাক হারাতেন, এবং ভারতীয় শল্যচিকিৎসকরা তাদের কপালের চামড়া ব্যবহার করে নতুন নাক তৈরি করতেন। এই প্রক্রিয়াটি এতটাই উন্নত ছিল যে এটি আধুনিক প্লাস্টিক সার্জারির একটি গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি হিসেবে ধরা হয়।
৫. ভাইকিংদের মজার কোড
৮০০ বছরের পুরনো একটি ভাইকিং কোড, “Jötunvillur”, যা অনেকদিন ধরে রহস্য হিসেবে ছিল, অবশেষে ক্রিপ্টো-নৃতত্ত্ববিদরা উন্মোচন করেন। এই কোডের বার্তাটি ছিল একটি রসিকতা: “আমাকে চুমু দাও।” ভাইকিংরা বিভিন্ন সময় সাংকেতিক ভাষা ব্যবহার করে বার্তা পাঠাত, তবে এই কোডটি মূলত মজার ছলে ব্যবহৃত হতো এবং এর কোনো গুরুতর অর্থ ছিল না।
৬. নব্য-আসিরীয়দের অদ্ভুত মুদ্রা
প্রাচীন তুরস্কের Ziyaret Tepe-এ প্রত্নতাত্ত্বিকরা বিভিন্ন আকৃতির মুদ্রা খুঁজে পান, যেগুলো পিরামিড, জাদুকরের টুপি, এবং অন্যান্য অদ্ভুত আকৃতির ছিল। এই মুদ্রাগুলো মূলত বাণিজ্য টোকেন হিসেবে ব্যবহৃত হত। যদিও সেই সময় কিউনিফর্ম লিপি প্রচলিত ছিল, মুদ্রাগুলোর অস্বাভাবিক আকৃতি প্রমাণ করে যে মানুষ বিভিন্নভাবে লেনদেন করতো, এবং লিখিতভাবে শুধু সবকিছু রেকর্ড করত না।
৭. জলবায়ু পরিবর্তন ও হরপ্পা সভ্যতার পতন
হরপ্পা সভ্যতা, যেটি প্রাচীন মিশর ও মেসোপটেমিয়ার থেকেও উন্নত ছিল, প্রায় ৪ হাজার বছর আগে হারিয়ে যায়। গবেষকরা আবিষ্কার করেছেন যে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে হরপ্পার কৃষিক্ষেত্র সংকুচিত হয়েছিল এবং বড় নদীগুলি শুকিয়ে গিয়েছিল। এর ফলে শহরগুলো পতনের দিকে ধাবিত হয় এবং বাসিন্দারা পূর্ব দিকে গঙ্গা নদীর উপত্যকায় স্থানান্তরিত হতে বাধ্য হয়।
৮. প্রাচীন মিশরে বামনের উচ্চ মর্যাদা
২০০৫ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে যে, প্রাচীন মিশরে বামনরা অত্যন্ত উচ্চ মর্যাদায় অধিষ্ঠিত ছিলেন। তারা মূলত গহনা প্রস্তুতকারী, ব্যক্তিগত সহকারী এবং শিল্পী হিসেবে কাজ করতেন। মিশরীয় সমাজে বামনদের এতই মূল্যবান মনে করা হত যে, তাদের রাজকীয় কবরস্থানে সমাহিত করা হত, যা তাদের সামাজিক মর্যাদা এবং গুরুত্বের পরিচয় বহন করে।
৯. নাজকা সভ্যতার পতনের কারণ
নাজকা সভ্যতা তার বিশাল শৈল্পিক কাজের জন্য বিখ্যাত ছিল, বিশেষ করে তাদের ভূমির ওপর আঁকা বিশাল জ্যামিতিক চিত্রগুলির জন্য। তবে তাদের পতনের পেছনে মূল ভূমিকা ছিল বন উজাড়। কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা দেখিয়েছেন যে, নাজকারা কৃষিকাজের জন্য হুয়ারাঙ্গো গাছ কেটে ফেলেছিল, যা প্লাবন রোধে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করত। ফলস্বরূপ, প্রচণ্ড বন্যার কারণে জমিগুলি কৃষির জন্য অনুপযোগী হয়ে পড়ে এবং সভ্যতা ধ্বংসের মুখে পড়ে।
আরও জানুনঃ পৃথিবীর সবচেয়ে রহস্যময় স্থান
১০. ম্যামথ টাস্ক থেকে মূর্তি তৈরি
সাইবেরিয়ায় প্রায় ১২,০০০ বছর আগে প্রাগৈতিহাসিক লোকেরা ম্যামথ টাস্ক ব্যবহার করে প্রাণীর মূর্তি তৈরি করত। তারা টাস্কগুলোকে মোল্ড করে ভাস্কর্য তৈরি করত, যা পরবর্তীতে শক্ত হয়ে যেত। এই মূর্তিগুলো সম্ভবত ধর্মীয় অনুষ্ঠানে ব্যবহৃত হত কিংবা খেলনা ও গয়না হিসেবে তৈরি করা হত। ম্যামথ টাস্ক থেকে তৈরি এমন শিল্পকর্মগুলো তাদের শৈল্পিক দক্ষতার প্রমাণ বহন করে।
এই নতুন তথ্যসমূহ প্রাচীন সভ্যতা ও রহস্যের বিভিন্ন দিকের ওপর আরও আলোকপাত করে এবং ঐতিহাসিক গবেষণার প্রতি আকর্ষণ বৃদ্ধি করে।