পিরামিড! এই শব্দটা শুনলেই আমাদের মনে ভেসে ওঠে মিশরের মরুভূমিতে দাঁড়িয়ে থাকা বিশাল আকৃতির পাথরের স্তূপ। প্রাচীন মিশরীয় সভ্যতার এই স্থাপনাগুলো শুধু তাদের আকারের জন্য নয়, বরং নির্মাণের পিছনে থাকা অসাধারণ ইতিহাস এবং রহস্যের জন্যও বিখ্যাত। চলুন, পিরামিড নিয়ে কিছু মজার ও তথ্যবহুল বিষয় জেনে নেই!
পিরামিড মূলত সমাধিক্ষেত্র। প্রাচীন মিসরের শাসনকর্তা ফারাওদের মৃত্যুর পর তাদের সমাহিত করা হতো এই বিশাল সমাধিক্ষেত্রে। বিশ্বের সবচেয়ে বিখ্যাত পিরামিডগুলো মিশরে অবস্থিত। এগুলো প্রাচীন মিশরীয় ফারাওদের সমাধি হিসেবে তৈরি করা হয়েছিল। মিশরীয়দের মতে, ফারাওরা মৃত্যুর পরও দেবতার মতো পূজিত হতেন, তাই তাদের সমাধি ছিল অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে নির্মিত।
পিরামিডের নির্মাণ ইতিহাসের অন্যতম প্রাচীন এবং অমীমাংসিত ধাঁধাগুলোর একটি।পৃথিবীর বহু স্থানে পিরামিড তৈরি হয়েছে, তবে মিশরের পিরামিডগুলো সবচেয়ে বিখ্যাত, বিশেষ করে গিজার গ্রেট পিরামিড। হাজার বছর ধরে বিভিন্ন সভ্যতা পৃথিবীর নানা প্রান্তে পিরামিড নির্মাণ করেছে, এবং আশ্চর্যের বিষয় হলো, এদের গঠন ও পরিকল্পনায় রয়েছে বিস্ময়কর মিল। মনে হয় যেন এগুলো একই স্থপতির হাতে নির্মিত। বিশ্বের প্রাচীনতম পিরামিডগুলোর মধ্যে রয়েছে ব্রাজিলের পিরামিড, যেগুলো প্রায় ৫০০০ বছর আগে এক অজানা সভ্যতা নির্মাণ করেছিল। এগুলো পৃথিবীর প্রাচীনতম পিরামিড হিসেবে স্বীকৃত হলেও মিশরের পিরামিডগুলোর মতো এতটা টেকসই ছিল না। ব্রাজিলের পিরামিডগুলো ঝিনুক ও ভাঙা পাথর দিয়ে নির্মিত হওয়ায় ধীরে ধীরে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে। একসময় ব্রাজিলে প্রায় এক হাজার পিরামিড ছিল, তবে আজ এগুলোর অধিকাংশই হারিয়ে গেছে, কারণ আধুনিক যুগের স্থাপত্য নির্মাণে এগুলো ধ্বংস করা হয়েছে।
ইতিহাসের সবচেয়ে বিখ্যাত পিরামিডগুলো গিজায় অবস্থিত, বিশেষ করে খুফুর পিরামিড। প্রাচীন মিশরীয়রা কিভাবে এই বিশাল পিরামিডগুলো তৈরি করেছিল, তা নিয়ে শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে গবেষণা চলছে। মিশরের পিরামিডগুলো প্রায় ৪৫০০ বছর আগের।। এটি প্রায় ১৩৮ মিটার (৪৫৫ ফুট) উচ্চতা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে, যা প্রাচীনকালের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কারুকার্যের উদাহরণ।
গিজার গ্রেট পিরামিডটি শুধু স্থাপত্যশৈলীর নিদর্শন নয়, বরং এর মধ্যে জ্যামিতিক ও গাণিতিক ফর্মুলাগুলোর ব্যবহার একে আরও রহস্যময় করে তুলেছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, পিরামিডগুলো নক্ষত্রপুঞ্জের অবস্থানের সাথে মিল রেখে তৈরি করা হয়েছে। মিশরীয়রা নক্ষত্রপুঞ্জের সাথে তাদের স্থাপত্যের মিল রেখে শক্তিশালী এনার্জির ধারণা পোষণ করত। যদিও পিরামিডকে ফারাওদের সমাধি হিসেবে গণ্য করা হয়, এর গভীরে লুকানো অনেক রহস্য এখনো আমাদের কাছে উন্মোচিত হয়নি।
আরও জানুনঃ মিশরের পিরামিড এর রহস্য ও তৈরির অজানা ইতিহাস
পিরামিড নির্মাণের পিছনে মূলত প্রাচীন মিশরীয় স্থপতি ও শ্রমিকরা ছিলেন। হাজার হাজার মিশরীয় শ্রমিক, স্থপতি এবং প্রকৌশলী বছরের পর বছর অক্লান্ত পরিশ্রম করে এই বিশাল কাঠামোগুলো তৈরি করেছিলেন। কেউ কেউ মনে করেন, এই শ্রমিকরা ছিল দাস, তবে অনেক ঐতিহাসিকের মতে, তারা আসলে দক্ষ শ্রমিক ছিলেন, যারা মিশরীয়দের সভ্যতার অন্যতম শক্তিশালী নিদর্শন হিসেবে কাজ করতেন।
পিরামিড তৈরি করা হয়েছিল মূলত ফারাওদের সমাধি হিসেবে। মিশরীয়রা বিশ্বাস করতেন, ফারাওরা মৃত্যুর পর তাদের আত্মা “আখিরাতে” নতুন জীবন শুরু করবে। তাদের নতুন জীবনের জন্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র পিরামিডের ভিতরে রাখা হতো, যেমন—সোনা, রূপা, অলংকার, খাদ্য ইত্যাদি। পিরামিডকে ফারাওদের পরবর্তী জীবনের জন্য একটি “প্রবেশদ্বার” হিসেবে দেখা হতো।
পিরামিডের সবচেয়ে বড় রহস্যগুলোর একটি হল কিভাবে প্রাচীন মিশরীয়রা এত বিশাল ও ভারী পাথরের ব্লকগুলো একত্রিত করেছিল। প্রযুক্তিগতভাবে সেই সময়ে অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি না থাকলেও, পিরামিডের প্রতিটি ব্লক খোদাই করে তোলা হতো এবং লিপির সাহায্যে একত্রিত করা হতো। অনেকের মতে, হাজার হাজার শ্রমিক এবং বহু বছরের পরিশ্রমের ফলেই এই অসাধারণ নির্মাণকাজ সম্ভব হয়েছিল।
পিরামিডের ভেতরে সাধারণত রয়েছে ফারাওদের সমাধি এবং অনেক গোপন কক্ষ। সমাধিতে ফারাওদের মমি করা দেহ রাখা হতো, সাথে সোনাদানা, গহনা, এবং অন্যান্য মূল্যবান সামগ্রী। এছাড়াও অনেক পিরামিডের ভিতরে রয়েছে গোপন রাস্তা, যা সমাধির নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য তৈরি করা হয়েছিল। মিশরীয়রা বিশ্বাস করত, এই মূল্যবান জিনিসপত্র ফারাওদের নতুন জীবনে প্রয়োজন হবে। এছাড়াও ভেতরের দেয়ালে চিত্রিত থাকত প্রাচীন মিশরের সংস্কৃতি, ধর্ম এবং দৈনন্দিন জীবনের নানা দিক।
পিরামিড তৈরির সবচেয়ে বড় রহস্য হল কিভাবে এত বিশাল পাথরের ব্লকগুলো মিশরের মতো জায়গায় একত্র করা হয়েছিল। প্রতিটি ব্লকের ওজন ছিল কয়েক টন, অথচ তখনকার সময়ে আধুনিক প্রযুক্তি ছিল না। কিন্তু, কিছু গবেষক মনে করেন, মিশরীয়রা র্যাম্প ও রোলিং লগ ব্যবহার করত। র্যাম্প ও রোলিং লগ এর সাহায্যে পাথরগুলোকে স্থানান্তরিত করত। অন্যেরা মনে করেন, পুলির ব্যবহার বা জলভিত্তিক কৌশল অবলম্বন করা হতো। তবে আসলে কীভাবে পিরামিড তৈরি হয়েছিল, তা আজও নিশ্চিত নয়।
পিরামিড শুধু প্রাচীন মিশরীয়দের দক্ষতা এবং শিল্পের নিদর্শন নয়, বরং ইতিহাসের অন্যতম রহস্যময় স্থাপত্য। কেন এবং কিভাবে এই পিরামিডগুলো তৈরি করা হয়েছিল, তা নিয়ে বহু গবেষণা হয়েছে এবং আরও হবে। তবে একথা সত্যি যে, পিরামিডগুলো ইতিহাসের এক অমূল্য সম্পদ এবং প্রাচীন মিশরের সমৃদ্ধ সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের প্রতীক।
[…] এর রহস্য ও তৈরির অজানা ইতিহাস পিরামিড সম্পর্কে তথ্যঃ কী, কেন এবং কীভ… যদি আডলফ হিটলার-এর অস্তিত্ত্বই না […]
[…] এর রহস্য ও তৈরির অজানা ইতিহাস পিরামিড সম্পর্কে তথ্যঃ কী, কেন এবং কীভ… যদি আডলফ হিটলার-এর অস্তিত্ত্বই না […]
[…] এর রহস্য ও তৈরির অজানা ইতিহাস পিরামিড সম্পর্কে তথ্যঃ কী, কেন এবং কীভ… যদি আডলফ হিটলার-এর অস্তিত্ত্বই না […]