মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:৪৬ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::

নকিয়া কেনার গল্প: মাইক্রোসফটের ৭.৬ বিলিয়ন ডলারের বিশাল ক্ষতি

রিপোর্টার নাম / ১১৫ বার দেখেছে
আপডেট : মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:৪৬ পূর্বাহ্ন
মাইক্রোসফটের নকিয়া কেনার গল্প: ৭.৬ বিলিয়ন ডলারের বিশাল ক্ষতি
মাইক্রোসফটের নকিয়া অধিগ্রহণ: ৭.৬ বিলিয়ন ডলারের চুক্তি থেকে বিশাল ক্ষতির কাহিনী

মাইক্রোসফটের Nokia কেনার গল্প: ৭.৬ বিলিয়ন ডলারের বিশাল ক্ষতি

মাইক্রোসফট যখন Nokia মোবাইল Division কিনেছিল, তখন তারা একটি বড় পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়েছিল। তবে এই পরিকল্পনা শেষ পর্যন্ত এক বিশাল ব্যর্থতার গল্পে পরিণত হয়। কীভাবে মাইক্রোসফট নকিয়া মোবাইল ফোনকে কবর দিল, তাদের অপারেটিং সিস্টেম উইন্ডোজ ফোন ব্যর্থ হল, এবং শেষ পর্যন্ত ৭.৬ বিলিয়ন ডলার হারালো—এই গল্পটি প্রযুক্তির ইতিহাসের এক বড় শিক্ষা।

শুরু থেকে শেষ: নকিয়ার উত্থান ও পতন

প্রযুক্তির জগতে অনেক বিখ্যাত ব্যর্থতা দেখা গেছে, তবে মাইক্রোসফটের নকিয়া অধিগ্রহণ অন্যতম। ২০১৪ সালে, মাইক্রোসফট নকিয়ার মোবাইল ডিভিশন কেনে ৭.২ বিলিয়ন ডলারে, তখন নকিয়া সংকটে ভুগছিল। মাইক্রোসফটের উদ্দেশ্য ছিল এই অধিগ্রহণের মাধ্যমে অ্যাপলের iOS এবং গুগলের অ্যান্ড্রয়েড কে প্রতিযোগিতায় টেক্কা দেয়া এবং স্মার্টফোন বাজারে আধিপত্য বিস্তার করা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এই সিদ্ধান্ত একটি ব্যর্থতায় পরিণত হয়।

আরও জানুনঃ নকিয়ার রাজত্ব থেকে বিলুপ্তি

নকিয়ার সাফল্য এবং নতুন চ্যালেঞ্জ

Nokia, একসময় মোবাইল ডিভাইস বাজারের শীর্ষস্থানীয় কোম্পানি ছিল। তবে Symbian অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহারের কারণে তারা iOS এবং অ্যান্ড্রয়েড এর সাথে প্রতিযোগিতা করতে ব্যর্থ হয়। ২০১০ সালে, মাইক্রোসফটের থেকে আসা একজন নতুন সিইও Symbian ত্যাগ করে Windows Phone ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নেন। এই সিদ্ধান্তটাই ছিল নকিয়ার মোবাইল ডিভিশনের পতনের মূল কারণ।

ভুল সিদ্ধান্ত এবং প্রতিযোগিতার সাথে তাল মেলাতে না পারা

নকিয়া সেই সময়ে Meego এবং Maemo নামের দুটি অপারেটিং সিস্টেম নিয়ে কাজ করছিল, যা স্মার্টফোন এবং ট্যাবলেটের জন্য ছিল। কিন্তু ২০১১ সালে, এই প্রজেক্টগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়। তারা অ্যান্ড্রয়েডে পরিবর্তন আনতে পারত, কিন্তু সেটা করেনি। উইন্ডোজ ফোনে সুইচ করার সিদ্ধান্ত প্রথমে যৌক্তিক মনে হলেও, iOS এবং অ্যান্ড্রয়েড এর বিপক্ষে তা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে ব্যর্থ হয়।

উইন্ডোজ ফোন এর জনপ্রিয়তা কম থাকায় অ্যাপ ডেভেলপাররা এই প্ল্যাটফর্মে সময় এবং প্রচেষ্টা ব্যয় করতে চাননি। অন্যদিকে, ব্যবহারকারীরাও উইন্ডোজ ফোনে কম অ্যাপের কারণে iOS বা অ্যান্ড্রয়েড ব্যবহার করতে শুরু করেন।

মাইক্রোসফটের ক্ষতি এবং Nokia পতনঃ

২০১৩ সালে, মাইক্রোসফট নকিয়ার টেলিফোন ব্যবসা কিনতে আগ্রহ প্রকাশ করে। ৭.২ বিলিয়ন ডলারের এই চুক্তিতে নকিয়ার মোবাইল ডিভিশন এবং পেটেন্ট অন্তর্ভুক্ত ছিল। ২০১৪ সালে, মাইক্রোসফট নকিয়ার মোবাইল ডিভিশন অধিগ্রহণ করে এবং Lumia ব্র্যান্ড তৈরি করে। কিন্তু খুব দ্রুতই স্পষ্ট হয়ে যায় যে মাইক্রোসফট সফলভাবে মোবাইল বাজারে প্রবেশ করতে পারছে না।

২০১৫ সালে, মাইক্রোসফট ৭.৬ বিলিয়ন ডলার ক্ষতি হিসেবে লিখে রাখে এবং ৭,৮০০ কর্মীকে ছাঁটাই করে। পরবর্তীতে ২০১৬ সালে, মাইক্রোসফট নকিয়ার মোবাইল ডিভিশন চীনা কোম্পানি FIH মোবাইল এবং ফিনল্যান্ডের HMD Global এর কাছে মাত্র ৩৫০ মিলিয়ন ডলারে বিক্রি করে দেয়।

আরও জানুনঃ মোবাইল ইতিহাসের সবচেয়ে আইকনিক মডেল সম্পর্কে।

HMD Global-এর মাধ্যমে নকিয়ার নতুন যাত্রাঃ

এইচএমডি গ্লোবাল, নকিয়া ব্র্যান্ড ব্যবহারের অধিকার পেয়ে কিছু সময়ের জন্য স্মার্টফোন তৈরি করে। কিন্তু ২০২৪ সালে, এইচএমডি গ্লোবাল ঘোষণা দেয় যে তারা নকিয়া ব্র্যান্ড ত্যাগ করে তাদের নিজস্ব ব্র্যান্ডের অধীনে ফোন তৈরি করবে। এর মাধ্যমে নকিয়া ফোনের একসময়ের গৌরবময় যুগের সমাপ্তি ঘটে।

মাইক্রোসফটের ব্যর্থতার শিক্ষা

মাইক্রোসফটের মতো বিশাল প্রতিষ্ঠানও ব্যর্থ হতে পারে যদি তারা বাজারের চাহিদা এবং প্রযুক্তিগত পরিবর্তনের সাথে তাল মিলিয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে ব্যর্থ হয়। নকিয়া কেনার পরেও মাইক্রোসফট মোবাইল বাজারে সফল হতে পারেনি। iOS এবং অ্যান্ড্রয়েডের সাথে প্রতিযোগিতা করার জন্য তাদের কাছে প্রয়োজনীয় অ্যাপ ডেভেলপারদের সমর্থন এবং ব্যবহারকারীদের চাহিদা পূরণের উপযুক্ত প্ল্যাটফর্ম ছিল না।

 


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এর রকম আরো পোষ্ট