সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:৪৭ অপরাহ্ন
শিরোনাম ::

ডায়াবেটিস: উপসর্গ, চিকিৎসা, ও প্রতিরোধের উপায়

রিপোর্টার নাম / ১১৯ বার দেখেছে
আপডেট : সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:৪৭ অপরাহ্ন
ডায়াবেটিস এর লক্ষণ, চিকিৎসা ও প্রতিরোধ
ডায়াবেটিস একটি গুরুতর রোগ হলেও, সঠিক চিকিৎসা ও জীবনধারা পরিবর্তনের মাধ্যমে স্বাভাবিক ও সুস্থ জীবনযাপন সম্ভব।

ডায়াবেটিস: উপসর্গ, চিকিৎসা ও প্রতিরোধ

ডায়াবেটিস হলো এমন একটি দীর্ঘস্থায়ী রোগ যেখানে শরীর সঠিকভাবে ইনসুলিন ব্যবহার করতে পারে না। ইনসুলিন একটি হরমোন যা রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। যখন ইনসুলিন ঠিকমতো কাজ করে না বা পর্যাপ্ত পরিমাণে উৎপন্ন হয় না, তখন রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যায়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, ডায়াবেটিস আক্রান্তের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে, যা আমাদের স্বাস্থ্যসেবার জন্য বড় একটি চ্যালেঞ্জ।

ডায়াবেটিসের ধরন

টাইপ ১ ডায়াবেটিস

এই ধরনের ডায়াবেটিসে, শরীরের ইমিউন সিস্টেম অগ্ন্যাশয়ের ইনসুলিন উৎপাদনকারী কোষগুলোকে আক্রমণ করে। ফলে, শরীর পর্যাপ্ত পরিমাণে ইনসুলিন তৈরি করতে পারে না। এটি সাধারণত শিশু ও কিশোরদের মধ্যে দেখা যায়, তবে প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যেও হতে পারে।

টাইপ ২ ডায়াবেটিস

টাইপ ২ ডায়াবেটিসে, শরীরের কোষগুলো ইনসুলিনের প্রতি সংবেদনশীলতা হারায়। একে ইনসুলিন প্রতিরোধও বলা হয়। ফলে, শরীর কার্যকরভাবে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। এটি সাধারণত প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে দেখা যায়, কিন্তু বর্তমানে শিশু ও কিশোরদের মধ্যেও বাড়ছে, প্রধানত স্থূলতার কারণে।

প্রিডায়াবেটিস

প্রিডায়াবেটিস এমন একটি অবস্থা যেখানে রক্তে শর্করার মাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি, কিন্তু ডায়াবেটিসের পর্যায়ে পৌঁছেনি। যদি সময়মতো ব্যবস্থা নেওয়া না হয়, তাহলে এটি টাইপ ২ ডায়াবেটিসে পরিণত হতে পারে।

গর্ভকালীন ডায়াবেটিস

গর্ভাবস্থায় কিছু নারীর রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যেতে পারে। সাধারণত জন্মের পর এটি সেরে যায়, কিন্তু ভবিষ্যতে টাইপ ২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ায়।

ডায়াবেটিস এর লক্ষণ

  1. ঘন ঘন প্রস্রাব: রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে গেলে কিডনি বাড়তি শর্করা প্রস্রাবের মাধ্যমে বের করে দিতে চেষ্টা করে। ফলে বারবার প্রস্রাবের প্রয়োজন হয়।
  2. অতিরিক্ত তৃষ্ণা: ঘন ঘন প্রস্রাবের কারণে শরীর থেকে পানি হারায়, যা তৃষ্ণার্ত করে তোলে।
  3. ওজন কমে যাওয়া: স্বাভাবিক বা বেশি খাওয়া সত্ত্বেও ওজন কমতে পারে। কারণ, শরীর গ্লুকোজকে ঠিকমতো ব্যবহার করতে পারে না এবং চর্বি ও পেশি ভেঙে শক্তি উৎপাদন করে।
  4. ক্লান্তি: গ্লুকোজ কোষে পৌঁছাতে না পারলে শরীর পর্যাপ্ত শক্তি পায় না, ফলে ক্লান্তি বোধ হয়।
  5. ক্ষত ধীরে সারে: উচ্চ রক্তে শর্করা ক্ষত সেরে উঠতে বাধা দেয়। ফলে ছোটো কাটাছেঁড়াও ধীরে সারে।
  6. ত্বকের সমস্যা: ত্বক শুষ্ক ও চুলকানি হতে পারে। ফাঙ্গাল বা ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণও বেশি দেখা যায়।
  7. দৃষ্টিশক্তি ঝাপসা হওয়া: রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে গেলে চোখের লেন্সে সমস্যা হতে পারে, যা দৃষ্টিশক্তি ঝাপসা করে।
  8. পায়ে ঝিনঝিন বা অবশ বোধ: স্নায়ুতন্ত্রের ক্ষতির কারণে এই সমস্যা হয়।
  9. মাড়ির সমস্যা: ডায়াবেটিস মাড়ি ও দাঁতের সমস্যা বাড়াতে পারে।

 

ডায়াবেটিসের চিকিৎসাঃ

ডায়াবেটিসের চিকিৎসা রোগের ধরণ ও ব্যক্তির অবস্থার উপর নির্ভর করে। তবে কিছু সাধারণ পদ্ধতি রয়েছে:

  1. ইনসুলিন থেরাপি: টাইপ ১ ডায়াবেটিসে ইনসুলিন ইনজেকশন অপরিহার্য। ইনসুলিন পাম্পের মাধ্যমেও ইনসুলিন সরবরাহ করা যেতে পারে।
  2. ওষুধ: টাইপ ২ ডায়াবেটিসে মুখে খাওয়ার ওষুধ ব্যবহার করা হয়। এগুলো শরীরের ইনসুলিন উৎপাদন বাড়ায় বা কোষে ইনসুলিনের কার্যকারিতা বাড়ায়।
  3. খাদ্য নিয়ন্ত্রণ: সুষম খাদ্য গ্রহণ রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। কম গ্লাইসেমিক সূচকযুক্ত খাবার, ফাইবার সমৃদ্ধ সবজি, এবং প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া উচিত।
  4. শারীরিক ব্যায়াম: নিয়মিত ব্যায়াম ইনসুলিন সংবেদনশীলতা বাড়ায় এবং রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
  5. রক্তে শর্করার নিয়মিত পরীক্ষা: নিয়মিত রক্তে শর্করার মাত্রা পরীক্ষা করে চিকিৎসা পরিকল্পনা সমন্বয় করা যায়।
  6. জীবনধারা পরিবর্তন: ধূমপান বন্ধ করা, মদ্যপান কমানো, এবং মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ ডায়াবেটিস ব্যবস্থাপনার অংশ।
  7. ডায়াবেটিস শিক্ষা: রোগী ও তাদের পরিবারের সদস্যদের ডায়াবেটিস সম্পর্কে জ্ঞান থাকা গুরুত্বপূর্ণ। এতে রোগ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য হয়।
  8. সমর্থন গোষ্ঠী: সমমনা মানুষের সঙ্গে আলোচনা ও অভিজ্ঞতা বিনিময় মানসিকভাবে সাহায্য করে।
  9. জটিলতার পর্যবেক্ষণ: নিয়মিত চোখ, কিডনি, এবং পায়ের পরীক্ষা জটিলতা প্রতিরোধে সহায়তা করে।

 

টাইপ ২ ডায়াবেটিসের প্রতিরোধঃ

  1. ওজন নিয়ন্ত্রণ: অতিরিক্ত ওজন টাইপ ২ ডায়াবেটিসের প্রধান ঝুঁকি। শরীরের ওজন ৫-১০% কমালেও ঝুঁকি কমে।
  2. শারীরিক কার্যকলাপ: নিয়মিত ব্যায়াম ইনসুলিন সংবেদনশীলতা বাড়ায়। প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটা, সাইক্লিং বা সাঁতার কাটার মতো ব্যায়াম করা উচিত।
  3. স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস: সুষম খাদ্য রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। পূর্ণ শস্য, সবজি, ফলমূল, লীন প্রোটিন ও স্বাস্থ্যকর চর্বি গ্রহণ করা উচিত।
  4. ধূমপান ও মদ্যপান এড়ানো: এগুলো ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ায়।
  5. নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা: ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তিদের নিয়মিত রক্তে শর্করার পরীক্ষা করা উচিত। বয়স ৪৫-এর উপরে হলে বা পরিবারে ডায়াবেটিসের ইতিহাস থাকলে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়া উচিত।
  6. মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ: যোগব্যায়াম, মেডিটেশন বা অন্য কোনো পদ্ধতির মাধ্যমে মানসিক চাপ কমানো যেতে পারে।

 

ডায়াবেটিস একটি গুরুতর রোগ হলেও, সঠিক চিকিৎসা ও জীবনধারা পরিবর্তনের মাধ্যমে স্বাভাবিক ও সুস্থ জীবনযাপন সম্ভব। সচেতনতা ও সময়মতো ব্যবস্থা নেওয়া ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের চাবিকাঠি। সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করে আপনি আপনার এবং আপনার পরিবারের সুস্থতা নিশ্চিত করতে পারেন।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এর রকম আরো পোষ্ট